মোবাইল ব্যাংকিং কি ? মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা এবং অসুবিধা ?
বর্তমানে এই ডিজিটাল যুগে আমরা প্রায়ই মোবাইল ব্যাংকিং নামটা শুনেছি। মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খোলার নিয়ম আপনারা প্রয় অনেকে জানেন । এই মোবাইল ব্যাংকিং আসার ফলে ব্যাংকিং সেক্টরের অনেকগুলো কাজ আমরা বাড়িতে বসে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে করতে পারি। এর ফলে স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গোটা পৃথিবীতে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারকারীর সংখ্যাও কিন্তু দিন দিন বেড়ে চলেছে ।
what is mobile banking in bengali |
ব্যাংকের যে কোন কাজ করার জন্য কিন্তু আমাদেরকে সেখানে যেতে হয় যেমন ব্যাংকে টাকা তোলা, ব্যাংকে টাকা জমা করা, ব্যাংকের transaction history চেক করা বা passbook আপডেট করা ইত্যাদি।
তো আমরা আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করব মোবাইল ব্যাংকিং কি ? মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা ? মোবাইল ব্যাংকিং এর অসুবিধা ? ইত্যাদি বিষয় ।
মোবাইল ব্যাংকিং কি ? বা মোবাইল ব্যাংকিং কাকে বলে? (What is mobile banking in Bengali) :
মোবাইল ব্যাংকিং ধারণা বা মোবাইল ব্যাংকিং বলতে বোঝায় মোবাইল এর মাধ্যমে যে কোনো আর্থিক লেনদেন করা কে। অর্থাৎ মোবাইলের মাধ্যমে আপনি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
এই মোবাইল ব্যাঙ্কিং পরিষেবা আসার পর থেকে ব্যাংকিং সেক্টরের বিভিন্ন রকম কাজ করার জন্য কিন্তু আপনার ব্যাংকে যাওয়া দরকার পড়ে না আপনি কিন্তু সেটা ঘরে বসে আপনার স্মার্টফোনের মাধ্যমে করতে পারেন। এর জন্যে গোটা পৃথিবীতে দিনদিন মোবাইল ব্যাংকিং এর প্রসার বেড়েই চলেছে।
মোবাইল ব্যাংকিং এর ইতিহাস (History of mobile banking) :
মূলত স্মার্ট ফোন আবিষ্কার এর আগে মোবাইল ব্যাংকিং এর প্রচলন ছিল না। 90 দশকের শেষে যখন স্মার্টফোনের প্রচলন হয় । 1999 সালের পর থেকে মূলত এই ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালু হয়।
1999 সালের আগে SMS মাধ্যমে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু ছিল যা SMS ব্যাংকিং নামে পরিচিত। 2010 পর স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে তার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং এর প্রচলন ও বাড়তে থাকে।
2008 সালে ভারতে ICICI Bank mobile banking অ্যাপ পরিষেবা চালু হয়। 2002 সালে ভারতে সর্বপ্রথম মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা চালু হয় তখন ট্রানজাকশন SMS মাধ্যমে করা হতো।
এছাড়া 2011 সালে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ডাচ বাংলা ব্যাংক (Dutch-Bangla Bank Rocket Bank) মোবাইল ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালু করে।
আরও পড়ুন : ইন্টারনেট ব্যাংকিং কি ? ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর সুবিধা ও অসুবিধা
mobile banking অ্যাপস কি ?
মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা মূলত মোবাইলের অ্যাপস বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে করা হয়। বর্তমানে নিজ নিজ দেশে অনেক মোবাইল ব্যাংকিং এর অ্যাপস রয়েছে বেশিরভাগ সেগুলো Play Store পাওয়া যায়।
এই মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপস এর মাধ্যমে যে কাউকে টাকা আদান-প্রদান করতে পারবেন । এই পরিষেবা কে এক দিক দিয়ে নেট ব্যাঙ্কিং বলা হয়।
মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা :
এই মোবাইল banking এর প্রচুর সুবিধা রয়েছে banking sector এর অনেক কাজ আপনি বাড়িতে বসে স্মার্টফোনের মাধ্যমে করতে পারবেন। এর জন্য কিন্তু আপনার ব্যাংকে যাওয়া প্রয়োজন পড়বে না। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কি কি সুবিধা রয়েছে সেগুলো নিচে আলোচনা করা হচ্ছে
১. পৃথিবীর যে কোনো স্থানে বসে আপনি স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট মাধ্যমে আপনার ব্যাংকে কত টাকা রয়েছে সেগুলো খুব সহজে জানতে পারবেন।
২. মোবাইল ব্যাংকিং মূলত ইন্টারনেটের মাধ্যমে চলে । এখনো অনেক জায়গায় যেমন গ্রাম অঞ্চলের দিকে ইন্টারনেট পরিষেবা নেই সেক্ষেত্রে তারা SMS বা মিস কলের মাধ্যমে bank details জানতে পারবে।
৩. আপনি পৃথিবীর যে কোনো স্থানে বসে আপনার ব্যাংকের সমস্ত transaction history চেক করতে পারবেন এই মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপস এর মাধ্যমে। এর জন্য আপনাকে কষ্ট করে ব্যাংকে গিয়ে বই আপডেট করা লাগবেনা।
৪. খুব সহজে আপনারা আপনার ব্যাংক একাউন্ট থেকে যেকোন ব্যাংক একাউন্টে টাকা transfer করতে পারবেন । অর্থাৎ Mobile ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অর্থ আদান-প্রদান করতে পারবেন।
৫. মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপস এর মাধ্যমে আপনারা আপনার মোবাইল রিচার্জ, ইলেকট্রিক বিল পেমেন্ট, গ্যাস বুকিং, ডিশ টিভি ও কেবিল রিচার্জ করতে পারবেন। এসব কাজের জন্য কিন্তু আপনাদেরকে দোকানে যাওয়া প্রয়োজন পড়বে না।
৬. এর সাহায্যে আপনারা অনলাইনে শপিং করতে পারবেন। অর্থাৎ আপনারা বাড়িতে বসে যেকোনো পণ্য অর্ডার করতে পারবেন এবং এই অ্যাপসের মাধ্যমে বিল পে করতে পারবেন।
৭. যেকোনো দোকান, শপিং মল, রেস্টুরেন্ট ও হোটেলে সমস্ত রকম বিল পে করতে পারবেন এই মোবাইল ব্যাংকিং এর সাহায্যে।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অসুবিধা :
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের যেমন অনেক সুবিধা রয়েছে ঠিক তেমনি কিছু অসুবিধা রয়েছে সেগুলো নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. অনেক সময় হকাররা ইমেইল বা মেসেজের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম লোভনীয় অফার আপনাদেরকে দেয়। আপনি যদি ভুল করে সে সমস্ত মেসেজে বা ইমেইলের লিংকে ক্লিক করেন তাহলে আপনার টাকা এক নিমেষে গায়েব হয়ে যেতে পারে। সুতরাং আপনারা কোন sms বা email ভালো করে না পড়ে ক্লিক করবেন না।
২. আপনার মোবাইল ব্যাংকিং এর পাসওয়ার্ড বা পাস কোড কেউ জেনে যায় তাহলে আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার মোবাইলের মাধ্যমে যে কোন ব্যাংকে টাকা টান্সফার করতে পারবে ।
বাংলাদেশ মোবাইল ব্যাঙ্কিং :
বাংলাদেশি অনেক মোবাইল ব্যাংকিং সমূহ রয়েছে সেগুলো নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো
১. রকেট :
ডাচ বাংলা ব্যাংক এর নিজস্ব মোবাইল ব্যাংকিং এর নাম হলো রকেট। 2011 Dutch Bangla Bank এর মোবাইল ব্যাঙ্কিং পরিষেবা রকেট চালু করে
২. বিকাশ :
বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি মোবাইল ব্যাঙ্কিং অ্যাপস এর নাম হচ্ছে বিকাশ । বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং চালু হয় 2011 সালে ।
৩. নগদ :
নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম এর যাত্রা শুরু হয় 2019 সালে। বর্তমানে এটি আস্তে আস্তে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা ও প্রচুর আছে
এছাড়া শিওর ক্যাশ, ইউ ক্যাশ, মাই ক্যাশ, রেডিক্যাশ, আমার অ্যাকাউন্ট, এজেন্ট ব্যাংকিং, ইসলামিক অনলাইন ইত্যাদি মোবাইল ব্যাঙ্কিং পরিষেবা বর্তমানে বাংলাদেশের চালু রয়েছে।
ভারতীয় মোবাইল ব্যাংকিং :
ভারতে অনেকগুলো জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাঙ্কিং পরিষেবা অ্যাপ রয়েছে সেগুলো নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো
১. Kotak 811 : ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং হচ্ছে কোটাক 811 এখানে আপনি জিরো ব্যালেন্স একাউন্ট খুলতে পারবেন । ভারতের অন্যতম ডিজিটাল ব্যাংক এটি
২. iMobile by ICICI Bank : এই mobile banking অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস এ পেয়ে যাবেন। এই অ্যাপসটি গুগোল প্লে স্টোরে পেয়ে যাবে।
৩. State Bank of India YONO App : একটি জনপ্রিয় একটি মোবাইল ব্যাংকিং এর । প্লে স্টোর থেকে প্রায় 50 মিলিয়ন লোক এ ব্যাংকিং অ্যাপসটি ডাউনলোড করেছি। যার রেটিং আছে 3.9 স্টার।
৪. HDFC mobile banking : ভারতের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক HDFC তাদের এই মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা টি বেশ জনপ্রিয়।
এ ছাড়া ভারতের আরো অনেক মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপস রয়েছে যেমন ICICI iMobile Application, Axis mobile app, IDBI go mobilMobile One, Boi Mobile ইত্যাদি
আসাকরি আপনারা মোবাইল ব্যাংকিং সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। আপনাদের যদি কোনরকম কোন কিছু বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন ধন্যবাদ।