বারকোড কি ? বারকোড কিভাবে তৈরি করে ? (What is barcode in Bengali)
বারকোড এ নামটা কিন্তু আপনারা প্রত্যেকে শুনেছেন এবং দেখেছেন। আপনারা শপিং মল থেকে কোন মাল কিনলে অথবা অনলাইন থেকে কোন প্রোডাক্ট কিনলে প্রোডাক্ট এর উপরে কালো সাদা লম্বা লম্বা কতগুলো লাইন দেখতে পান তো ওই কালো সাদা লম্বা লাইন গুলো কি ? এদের কাজ কি এ প্রশ্নটা কিন্তু আপনাদের অনেকেরই মাথায় আছে হ্যাঁ ওই কালো সাদা লম্বা লাইন গুলো হচ্ছে barcode।
তো আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব বারকোড কী (barcode kake bole) ? বারকোড কিভাবে তৈরি করে ? বারকোড এর কাজ কী ? ইত্যাদি বিষয়। তো আপনারা যদি এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়েন তাহলে বারকোড সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পারবেন।
Barcode in bangla |
বারকোড কি (what is barcode in Bangla ) :
অনলাইনে বা দোকান থেকে কোন প্রোডাক্ট কিনলে (যেমন সাবান তেল শ্যাম্পু ) সেই প্রোডাক্ট এর উপর সাদা কালো লম্বা লম্বা লাইন দেখতে পান তো এটাই হচ্ছে বারকোড।
তো এই বারকোড স্ক্যান করার মাধ্যমে ওই প্রোডাক্ট সম্পর্কে বিভিন্ন রকমের তথ্য জানতে পারবেন যেমন ওই পণ্যের মূল্য কত ছিল, সেটির ওজন কত ছিল কবে তৈরি হয়েছিল বা ওই পণ্যটি কোন কোম্পানির ইত্যাদি বিষয়।
বারকোড কাকে বলে (Barcode meaning in bengali) :
কোন পণ্য সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য (যেমন পণ্যটির দাম কত ছিল, পণ্যটি কবে তৈরি হয়েছিল ও সেটি কন কোম্পানির ইত্যাদি) সেই পণ্যের উপর সমান্তরালভাবে যে সাদা কালো দাগের সারি দেখতে পান তাকেই বারকোড বলে।
বারকোডের ইতিহাস কি?
বারকোড আবিষ্কারের পূর্বে 1890 সালে পাঞ্চকার্ড (punch card) আবিষ্কার হয়। এ পাঞ্চকার্ড এর সাহায্যে কোন পণ্য কে ট্র্যাক করা খুব জটিল ছিল। এরপর 1948 সালে Drexel University আলোচনা হয় যে প্রোডাক্ট এর উপর কোন কোড লেখা থাকলে সেটাকে খুব সহজে ট্র্যাক যায়। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র Norman Joseph Woodland শোনেন এবং তার বন্ধু Bernard Silver bolenge কে বলেন। তারা দুজনে এটির সমাধান খুঁজতে থাকেন।
তারপর তারা Ultraviolet Ink ব্যবহার করে কোড লিখতে শুরু করে কিন্তু এ প্রসেসটি খুব ব্যয়বহুল ছিল। এইজন্য Norman Joseph Woodland বারকোড আবিষ্কারের জন্য Morse code concept এর উপর কাজ শুরু করে যা dot (.) এবং dash (-) দিয়ে তৈরি। কিন্তু এটিও খুব বেশি জনপ্রিয় হয়নি।
তারপর হঠাৎ Norman Joseph Woodland ভাবেন যে Morse code এ dot এবং dash এর বদলে পাতলা এবং লম্বা লাইন ব্যবহার করলে কোড লেখা আরও সুবিধা হবে। এভাবেই এই দুইজন বিজ্ঞানীর বারকোড আবিষ্কার এর যাত্রা শুরু হয়। অর্থাৎ আপনাদেরকে কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে বারকোড কে আবিষ্কার করেন তাহলে এর সহজ উত্তর হবে Norman Joseph Woodland এবং Bernard Silver bolenge ।
বারকোড রিডার কী ?
বারকোড রিডার হলো এক ধরনের স্ক্যানিং মেশিন। যা বারকোড এর মধ্যে থাকা তথ্য ক্যাপচার করতে এবং পড়তে সাহায্য করে অর্থাৎ
দোকানে কোন পণ্য কিনতে গেলে দেখবেন সে পণ্যের উপর একটি বারকোড থাকে । সেই বারকোড এর মধ্যে থাকা তথ্যগুলো ক্যাপচার করতে বা পড়তে যে স্ক্যানিং মেশিন ব্যবহার করা হয় তাকে বারকোড রিডার বা বারকোড স্ক্যানার বলে।
Barcode স্ক্যান করার জন্য শুধুমাত্র bar code স্ক্যানার ই লাগবে এটা ঠিক সঠিক নয় বর্তমানে বারকোড স্ক্যান করার জন্য Play Store বা App Store এ অনেক অ্যাপ্লিকেশন পেয়ে যাবেন যেগুলোর মাধ্যমে আপনারা খুব সহজেই বারকোড স্ক্যান করতে পারবেন। আশাকরি বারকোড স্ক্যানার কি এবিষয়টি আপনারা বুঝতে পারলেন।
বারকোড রিডার এর কাজ কি ?
আমি আগেই বললাম বারকোড রিডার হলো এক ধরনের স্ক্যানিং মেশিন অর্থাৎ বারকোড রিডার এর কাজ হচ্ছে বারকোড এর মধ্যে যে কোড থাকে সেগুলো স্ক্যান করে তথ্যে রূপান্তর করা হচ্ছে বারকোড রিডার এর প্রধান কাজ।
বারকোড এর প্রকারভেদ ?
আসুন এবার জেনে নেই বারকোড কত প্রকার ও কি কি । Barcode মূলত দুই প্রকারের হয়।
1. One-Dimensional (1D Barcode) :
বর্তমানে সবথেকে বেশি ব্যবহারযোগ্য বারকোড হল 1D Barcode এতে কোডের সমস্ত তথ্য বাম থেকে ডানে অনুভূমিকভাবে সাজানো থাকে। 1D Barcode টেক্সট ইনফরশন সংরক্ষণ করার জন্য বেশি ব্যবহার করা হয়। এই ধরণের বরকত গুলো কি স্ক্যান করা খুবই সহজ যে কোন laser barcode reader অথবা আপনার মোবাইলের যে কোন বারকোড স্ক্যানার অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে scan করতে পারবেন।
3. Two-Dimensional (2D Barcode) :
2D Barcode গুলো একটু জটিল কারণ সেখানে তথ্য উলম্ব এবং অনুভূমিকভাবে সাজানো থাকে। এই ধরণের বারকোড গুলো বর্গাকার আয়তোকার বা বিভিন্ন জ্যামিতিক প্যাটার্ন মতো দেখতে হয়। 2D Barcode স্ক্যান করার জন্য উন্নত মানের bar code স্ক্যানার এর প্রয়োজন হয়। Airline boarding passes এবং ticketing জন্য এধরনের barcode গুলো সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।
বারকোড কিভাবে কাজ করে ?
আপনারা অনলাইনে বা বছর থেকে কোনো পণ্য কিনলে সে পণ্যের উপর সাদা কালো কতগুলি লম্বা লম্বা দাগ দেখতে পাই তো এটি মূলত বারকোড। তো এতে পণ্যের কিছু গোপন তথ্য লুকানো থাকে কোডের মাধ্যমে যেগুলো আমরা দেখতে পাই না । এইবার কোডগুলো স্ক্যান করলে সেই পণ্য সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আমরা জানতে পারি। তো এই বারকোড স্ক্যান করার জন্য বারকোড রিডার বা স্ক্যানিং মেশিন দ্বারা স্ক্যান করা হয় এবং সেই পণ্যের বিভিন্ন তথ্য আমরা কম্পিউটারের স্ক্রিনে দেখতে পাই।
বারকোড কিভাবে তৈরি করে ?
বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে কিন্তু আপনারা বারকোড তৈরি করতে পারবেন। আপনি যদি নিজে বারকোড তৈরি করতে চান তাহলে আপনার প্রোডাক্ট নাম্বার এবং প্রোডাক্ট symbol লাগবে এবং আপনি কম্পিউটার সফটওয়্যার এর মাধ্যমে Barcode তৈরি করতে পারবেন। barcode তৈরি করার জন্য অনেক barcode generator software আছে। এছাড়া আপনারা https://barcode.tec-it.com/en এই ওয়েবসাইটে গিয়ে bar code তৈরি করতে পারবেন।
বারকোড এর কাজ কী :
এই বারকোড সিস্টেম ব্যবহার করে বড় বড় কোম্পানির অনেক সুবিধা হয়েছে। তারা প্রত্যেকটি প্রোডাক্ট কে ভালো ভাবে ট্রাক করতে পারে যার ফলে সেগুলো কে ভালোভাবে পরিচালনা করতে সুবিধা হয়। বারকোড স্ক্যান করার মাধ্যমে যেকোনো পণ্যের বিভিন্ন তথ্য আমরা খুব সহজেই জানতে পারি যেমন পণ্যটি কবে তৈরি হয়েছিল, সেটি কোন কোম্পানির, পণ্যটির দাম কত ইত্যাদি বিষয়।
কিভাবে বারকোড চেক করবেন ?
বারকোড চেক করার অনেক উপায় রয়েছে আপনারা বারকোড রিডার দিয়ে খুব সহজে বারকোড চেক করতে পারবেন। এছাড়া আপনারা আপনার হাতে থাকায় স্মার্ট ফোন দিয়ে কিন্তু আপনারা খুব সহজেই বারকোড কে চেক করতে পারবেন বা স্ক্যান করতে পারবেন।
বারকোড চেক করার জন্য অনেক অ্যাপ্লিকেশন আপনারা প্লে স্টোরে বা অ্যাপ স্টোরে পেয়ে যাবেন যেগুলোর মাধ্যমে আপনারা খুব সহজে বারকোড চেক করতে পারবেন।
Barcode scanner application |
বারকোড কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় বা বারকোড এর ব্যবহার কী আশা করি আপনার এই বিষয়টি আপনারা বুঝতে পারলেন।
এ ছাড়া আপনাদের আর একটি প্রশ্ন মাথায় আসতে পারে সেটা হচ্ছেঃ বারকোড সাধারণত কত ডিজিটের হয় এর উত্তর হবে বারকোড সাধারণত 12 ডিজিটের হয়।
আশা করি আপনারা আজকের আর্টিকেল থেকে বারকোড মানে কি, বারকোড স্ক্যানার অনলাইন ও বারকোড কোথায় দেখা যায় এ বিষয়গুলি বুঝতে পারলেন।
বারকোড বিষয় নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি কেমন লাগলো অবশ্যই আপনারা নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন ধন্যবাদ।