হ্যাকিং কি ? হ্যাকিং কত প্রকার ও কি কি (What is hacking in bangla)
আধুনিক যুগে কম্পিউটার ইন্টারনেট প্রযুক্তির ব্যবহার দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে যার ফলে গোটা বিশ্ব আস্তে আস্তে ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে আমরা যত বেশি অনলাইন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছি ততবেশি কিন্তু সাইবার ক্রাইম (cyber crime) ও বেড়ে চলছে। সাইবারক্রাইম হচ্ছে অনলাইনে সংগঠিত অপরাধ। তো এই সাইবার অপরাধমূলক কাজ গুলো পরিচালিত হয় কিন্তু হ্যাকিংয়ের (hacking) মাধ্যমে ।
হ্যাকিং কি ? হ্যাকিং কত প্রকার ও কি কি |
এ হ্যাকিংয়ের জন্য কিন্তু আমাদের কম্পিউটার স্মার্টফোন ব্যাংক একাউন্ট নিরাপদ নয়। আপনি অনেকবার শুনেছেন ফেসবুক আইডি হ্যাক, টুইটার অ্যাকাউন্ট হ্যাক, ব্যাংকের সার্ভার হ্যাক, ব্যাংকের ডেটা চুরি ইত্যাদি
তো আজকের এই আর্টিকেলের আমরা আলোচনা করব হেকিং কি (bangla hacker) ? হ্যাকিং কি ভাবে শিখব ? কম্পিউটার হ্যাকিং কি ইত্যাদি বিষয় । তো আপনি যদি হ্যাকিং সম্পর্কে কিছু না জেনে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। চলুন তাহলে বেশি কথা না বলে হ্যাকিং মানে কি এই বিষয় টি জেনে নিই।
হ্যাকিং কি ? (What is hacking in Bengali) :
হ্যাকিং এমন এক ধরনের জিনিস যেখানে একজন ব্যক্তির কম্পিউটার সম্পর্কে বিভিন্ন জ্ঞান রয়েছে কম্পিউটার প্রোগ্রামের ত্রুটি বের করে কম্পিউটারকে পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে (access) করে নেয় এবং কম্পিউটার সিস্টেমের সমস্ত ডেটা চুরি করে অর্থাৎ এনক্রিপ্ট (encrypt) করে যাতে কেউ ওই ফাইলগুলি বা ডেটা গুলি হ্যাকার ছাড়া রিড করতে পারে না এটাই হচ্ছে হ্যাকিং ।
তবে অনেকেই মনে করেন যে হ্যাকিং মানে অবৈধভাবে বেআইনি কাজ তবে এটা পুরোপুরি সত্য নয়। Hacking মানেই যে illegal এটা ঠিক নয় হাকিং কে ভালো কাজে ব্যবহার করা যায় এবং খারাপ কাজে ব্যবহার করা যায়।
অনেক কোম্পানি অনেক এজেন্সি তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত ও ডেটা সুরক্ষিত করার জন্য ethical hacker দের আশ্রয় নেয়। যাতে কোনো ধরনের হ্যাকার তাদের ডেটা চুরি করতে না পারে। আশাকরি হ্যাকিং মানে কি (hacking meaning) এ বিষয়টি বুঝতে পারলেন।
হ্যাকিং কাকে বলে ?
হ্যাকিং হলো কম্পিউটার সিস্টেমের দুর্বলতা কে খুঁজে বার করে সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তার অনুমতি ছাড়া কম্পিউটার সিস্টেমের এক্সেস নেওয়া বা সিস্টেমে প্রবেশ করে ব্যক্তিগত তথ্য দেখাবে চুরি করাকে হ্যাকিং বলে।
হ্যাকিং কত প্রকার ও কি কি ?
হ্যাকিং প্রধানত 7 প্রকার । নিচে বিস্তারিত হ্যাকিং এর প্রকারভেদ গুলো আলোচনা করা হবে।
1. ওয়েবসাইট হ্যাকিং (website hacking)
নাম শুনে হয়ত বুঝতে পারছেন ওয়েবসাইট হ্যাকিং মানে ওয়েবসাইট হ্যাক করা । হ্যাকাররা ওয়েবসাইট টি হ্যাক করে ওয়েবসাইটটি পুরোপুরি নিজের কন্ট্রোলে নিয়ে নেয় এবং যা খুশি তাই পোস্ট করতে পারে এবং আপনার মালিকানা পরিবর্তন করতে পারে।
2. নেটওয়ার্ক হ্যাকিং (network hacking)
নেটওয়ার্ক হ্যাকিং মানে হচ্ছে নেটওয়ার্ক হ্যাক করা। উদাহরণস্বরূপ কোন কোম্পানি বা সরকারি অফিসের অনেকগুলো কম্পিউটার থাকে প্রত্যেকটি কম্পিউটার একটি লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক এর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে ওই local area network কে হ্যাক করা হচ্ছে নেটওয়ার্কিং হ্যাকিং এর ফলে নেটওয়ার্ক এর উপরে হ্যাকাররা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রন করে। Network হ্যাক করার জন্য মূলত অনেক ধরনের টুল ব্যবহার করা হয়।
3. এথিক্যাল হ্যাকিং (ethical hacking)
কোন কোম্পানির সিস্টেম সিকিউরিটি গুলোকে আরো secure করার জন্য মূলত হ্যাকাররা hack করে থাকে আর এটি পুরোপুরি legal । কম্পিউটার সিস্টেমের কোন জায়গায় গন্ডগোল আছে কিনা না বা কোন সমস্যা আছে কিনা এটি দেখাশোনার কাজ হল ethical হ্যাকারদের কারণ কোন Black Hat Hackers যেনো কম্পিউটার সিস্টেমকে hack না করতে পারে।
4. পাসওয়ার্ড হ্যাকিং (password hacking)
অনেক ধরনের টুলস এর সাহায্যে সিস্টেম এর পাসওয়ার্ড খুঁজে বের করা হলো পাসওয়ার্ড হ্যাকিং। তারা চাইলে সেই পাসওয়ার্ডটি চেঞ্জ করে নিজের ইচ্ছামত পাসওয়ার্ড দিয়ে সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
5. ই-মেইল হ্যাকিং (email hacking)
আপনারা অনেকেই শুনে থাকেন যে ইউটিউব চ্যানেল হ্যাক তো এই কাজটি মূলত ই-মেইল হ্যাকিং এর মাধ্যমে করে থাকে। কারোর ইমেইল হ্যাক করে মেইল চুরি করা বা নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে ই-মেইল হ্যাকিং। হ্যাকাররা ইমেইল হ্যাক করে ওই ইমেইল পুরোপুরি নিজের কন্ট্রোলে করে নেয় ইমেইলের পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে দেন যাতে কেউ access করতে না পারে।
6. মোবাইল হ্যাকিং (mobile hacking)
কারোর মোবাইল হ্যাক করা হচ্ছে মোবাইল হ্যাকিং। হ্যাকাররা মোবাইল হ্যাক করে ব্যক্তিগত তথ্য বা ডেটা হাতিয়ে নিয়ে । অনেক সময় হ্যাকাররা ইমেইল বা মেসেজে লিংক পাঠায় সেই লিংকে ক্লিক করলে কিন্তু আপনার মোবাইলের হ্যাকাররা নিয়ে নেবে।
7. কম্পিউটার হ্যাকিং (computer hacking)
এই ধরনের হ্যাকিং এর অর্থ হল হ্যাকাররা কম্পিউটার সিস্টেমকে hack করে কম্পিউটারের সমস্ত ডেটা চুরি করে নেয় বা নষ্ট করে দেয়। হ্যাকাররা বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়্যার , ভাইরাসের মাধ্যমে কম্পিউটার সিস্টেমকে করে।
হ্যাকার কাকে বলে ? (What is hacker)
হ্যাকার হলো যে ব্যক্তি যিনি কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ, নেটওয়ার্কিং স্কিল ইত্যাদি বিষয়ে গভীর পারদর্শী এবং যিনি কম্পিউটার সিস্টেমকে পুরোপুরি হ্যাক করে সমস্ত ডেটা হাতিয়ে নেয়। এবং হ্যাকাররা পরবর্তীকালে কম্পিউটার এর মালিক কে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা নেই। তারা বলে টাকা দিলে আমি ডেটা গুলো ফেরত দিবো এইভাবে মূলত ব্ল্যাকমেল করে। অর্থাৎ হ্যাকার বলতে এককথায় বোঝায় যে কম্পিউটার হ্যাক করে তাকে হ্যাকার বলে।
তবে সব হ্যাকারই খারাপ নয় ভালো হ্যাকার ও আছে ও খারাপ থাকার ও আছে। যেসব হ্যাকার মূলত মানুষদেরকে ক্ষতি করার চেষ্টা করে টাকা পয়সা বিভিন্ন ধরনের তথ্য হাতিয়ে নেয় তারা হচ্ছে খারাপ hacker। এছাড়া অনেক ভালো হ্যাকার নিরাপত্তার স্বার্থে, ভালো কাজের জন্য হ্যাক করে থাকে।
কোন হ্যাকার যদি বিনা অনুমতিতে কোন কিছু হ্যাক করে বা কম্পিউটার সিস্টেমের ডাটা চুরি করে তাহলে কিন্তু সেটা বেয়াইনী বলে গণ্য হবে। এমনকি তাদের আইনত শাস্তি হতে পারে । আশাকরি হ্যাকার কি বা হ্যাকার কে এ বিষয়টি বুঝতে পারলেন।
হ্যাকার কত প্রকার ও কি কি ?
সাধারণত হ্যাকার তিন প্রকারের হয়।
1. ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার (Black hat hacker)
ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকাররা আপনার পারমিশন ছাড়া নিজের স্বার্থ লাভের জন্য বিভিন্ন রকমের অবৈধ (illegal activities) কাজ করে থাকে যেমন কম্পিউটার সিস্টেম হাক করা, পাসওয়ার্ড হ্যাক করা, ব্যাংকের সার্ভার হ্যাক করা, ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরি করা, ব্যাংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়া ইত্যাদি। এই হ্যাকাররা আপনার সিস্টেম হ্যাক করে আপনার ডেটা নষ্ট বা ধ্বংস করে দিতে পারে। ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার কি আশা করি এই বিষয়টি বুঝতে পারলেন।
2. হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার (white hat hacker)
এই ধরনের হ্যাকাররা কোন অবৈধ (illegal) কাজ করে না। আপনার পারমিশন নিয়ে বৈধভাবে হক করে থাকে আপনার সিকিউরিটি কে আরো মজবুত করার জন্য। বড় বড় IIT কোম্পানিতে high security প্রদান করে হোয়াইট হ্যাট হ্যাকাররা। আশাকরি হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার কি বিষয়টি বুঝতে পারলেন।
3. গ্রে হ্যাট হ্যাকার (grey hat hacker)
এধরনের হ্যাকাররা বৈধ (legal) ও অবৈধ (illegal) দুই ধরনের কাজ করতে পারে। আপনার সিস্টেমকে হাক করে ডাটা চুরি বা ধ্বংস করতে পারে , চাইলে এই ধরনের হ্যাকাররা হাই সিকিউরিটি provide করতে পারে ।
এরা মূলত অনুমতি না নিয়ে সিস্টেমের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য হ্যাক করে থাকে কিন্তু এরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনরকম ক্ষতি করে না বা ডেটা চুরি করে না । এরা অবৈধ কারণ পারমিশন না নিয়েই গুলো করে । আশা করি করি গ্রে হ্যাট হ্যাকার কি বিষয়টা বুঝতে পারলেন।
তো আপনারা হ্যাকার কত প্রকার কোন hacker এর কি কাজ এবিষয়টি আপনারা বুঝতে পারলেন।
হ্যাকিং প্রতিরোধের উপায় :
আপনার ডিভাইস, আপনার সিস্টেমকে হ্যাকিং থেকে বাঁচার জন্য আরো সিকিওর করে তুলতে হবে। কোন কোন উপায়ে আপনার ডিভাইস সিস্টেম কে হ্যাকিং থেকে বাঁচার জন্য আরো বেশি secure করে তুলবেন সেগুলো নিচে আলোচনা করছি।
1. অপরিচিত ইমেইল বা মেসেজের লিংকে ক্লিক করবেন না :
অনেক সময় হ্যাকাররা বিভিন্ন রকম প্রলোভন দেখিয়ে ই-মইল বা মেসেজের মাধ্যমে লিংক শেয়ার করে অনেকেই সেই প্রলোভনে পা দিয়েছে লিংকে ক্লিক করে দেয় এবং সে সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু আপনার ডিভাইসের কন্ট্রোল হ্যাকাররা নিয়ে নেয়। সুতরাং ভেবে চিন্তে ভেরিফাই করে তবে কোন লিংকে ক্লিক করবেন।
2. টু স্টেপ ভেরিফিকেশন অন করুন :
আপনার ইমেইল আইডি ফেসবুকে অবশ্যই two step verification অন করে রাখেন। কেউ যদি আপনার ইমেইলের ফেসবুকের পাসওয়ার্ড জেনেও যায় তাহলে কিন্তু সেই ব্যক্তি ফেসবুক ইমেইল খুলতে পারবে না ।
3. অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন :
অনলাইন যেমন ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম টুইটার এইসব সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত তথ্য কম শেয়ার করার চেষ্টা করুন ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করলে হ্যাকাররা আপনার গতিবিধি বুঝতে পারে।
3. কঠিন পাসওয়ার্ড দিন :
আপনার কম্পিউটার, মোবাইলে, ইমেইলে সব সময় hard পাসওয়ার্ড দেওয়ার চেষ্টা করুন । 1-8, আটটা 1 এই সমস্ত পাসওয়ার্ড দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। পাসওয়ার্ড এ সব সময় @, নাম্বার, বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর ব্যবহার।
4. অন্যের ডিভাইসে Facebook, email এইগুলো লগইন করা থেকে বিরত থাকুন :
আপনারা কখনোই অন্য ডিভাইসে ইমেইল বা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লগইন করবেন না তাদের সার্ভারে কিন্তু আপনার পাসওয়ার্ড থেকে যায়। ভুলেও লগইন করলে লগআউট করে দিবেন
5. ভালোমতো ভেরিফাই করে অ্যাপ ডাউনলোড করুন :
আপনারা সবসময় গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করার চেষ্টা করবেন। third-party অ্যাপস আপনারা কোন ব্রাউজার থেকে না ডাউনলোড করার চেষ্টা করবেন বা অ্যাপস ডাউনলোড করার আগে ভালোমতো ভেরিফাই করুন, রেটিং চেক করুন রিভিউ দেখুন তারপর অ্যাপ ডাউনলোড করুন।
6. অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন :
আপনার কম্পিউটার সিস্টেমকে ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অবশ্যই আপনারা অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন। কম্পিউটারে ভাইরাস আক্রমণ প্রতিরোধ করে এন্টিভাইরাস।
তো আশা করি আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা হেকিং কি ? হ্যাক কি ? হ্যাকিং প্রতিরোধের উপায় এই সমস্ত বিষয় গুলো বুঝতে পারলেন।
তো হ্যাকিং (hack bangla) বিষয় নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই নিচে কমেন্ট বক্সে আপনাদের মতামত জানাতে পারেন ধন্যবাদ।