শেয়ার বাজার কি | শেয়ার বাজারে কিভাবে বিনিয়োগ করব | what is share market in bengali
শেয়ার বাজার এই নামটি আপনারা প্রত্যেকে শুনেছেন। তবে এই শেয়ার মার্কেটে টাকা ইনভেস্ট করে প্রচুর টাকা ইনকাম করা সম্ভব। আপনার যদি শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে একটু ধারণা থাকে এবং আপনার হাতে যদি প্রচুর অর্থ থাকে তাহলে সেই টাকাটা ব্যাংকে না রেখে বা fixed ডিপোজিট না করে ওই টাকাটা যদি share bazar এ ইনভেস্ট করেন তাহলে ব্যাংকে রাখলে যে পরিমাণ সুদ পাবেন তা থেকে অনেক বেশি টাকা ইনকাম করতে পারবেন। তবে না জেনে স্টক মার্কেট বা শেয়ার মার্কেটে টাকা ইনভেস্ট করলে আপনার লসও হতে পারে।
share market explain in bengali |
তো আপনারা কিন্তু অনেকে এই শেয়ার বাজার কি (share bazar ki) বা স্টক মার্কেট কি । শেয়ার বাজার ব্যবসা কিভাবে করে | শেয়ার বাজার কত প্রকার অর্থাৎ শেয়ার বাজার a to z ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
আপনি যদি এই আর্টিকেলটি ধৈর্য ধরে সম্পূর্ণ পড়েন তাহলে শেয়ার বাজার বলতে কি বুঝায় এ বিষয়টি জানতে পারবেন চলুন তাহলে বেশি কথা না বলে জেনে নেই শেয়ার বাজার কাকে বলে।
শেয়ার বাজার কি | What is share bazar in Bengali
শেয়ার বাজার হলো এমন এক ধরনের প্লাটফর্ম যেখানে শেয়ার বা stock কেনাবেচা করা হয়। যেখানে কোম্পানিগুলো স্টক এক্সচেঞ্জ (stock exchange) এর মাধ্যমে তাদের শেয়ার কেনা বেচা করে থাকে । ভারতের প্রধান দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ হল ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (NSE) এবং বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (BSE)। এই দুটি স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কোম্পানীর প্রচুর শেয়ার কেনা হয়েছে হয়। আপনি যদি কোন কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করেন তাহলে সেই কোম্পানির কিছুটা অংশীদার বা shareholder হয়ে যাবেন।
শেয়ার বাজার কিভাবে কাজ করে ?
উদাহরণস্বরূপ ধরুন আপনার একটি কোম্পানি আছে যেটির নাম XYZ আপনার কোম্পানির 1000 তি শেয়ার আছে অন্য কোন ব্যক্তি যদি আপনার এই কোম্পানির একটি শেয়ার কিনে নেয় তাহলে ১০০০ ভাগের একভাগ আপনার কোম্পানির ভাগীদার সে হয়ে যাবে। তবে অনেক বড় বড় কোম্পানি যেমন টাটা, রিলায়েন্স, আদানি পোর্ট, বাজাজ এইসব কোম্পানির লক্ষ লক্ষ শেয়ার আছে।
এবার আপনি যদি একটি বড় কোম্পানি শেয়ার বা স্টক কিনেন তাহলে সেই কোম্পানির কিছুটা মালিকানা আপনিও হয়ে যাবেন যখন ওই কোম্পানিটার ভ্যালু বাড়বে সে সঙ্গে সঙ্গে আপনার শেয়ারের ও দাম বাড়বে এবং অপরদিকে ওই কোম্পানির ভ্যালু কমলে আপনার শেয়ারের ভ্যালু ও কমে যাবে।
ধরুন আপনার একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি আছে যেটি খুবই ভালো চলছে। এবার আপনি আপনার এই ফ্যাক্টরিটি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে চাইছেন , পৃথিবীর ৫০ টি শহরে এরকম ফ্যাক্টরি তৈরি করতে চাইছেন আপনার ব্যবসাটাকে বাড়ানোর জন্য সে ক্ষেত্রে আপনার ১০০ কোটি টাকার প্রয়োজন তখন আপনি কি করবেন এই টাকাটি কোথায় পাবেন আপনার হাতে কতগুলো উপায় থাকতে পারে এই টাকাগুলো ম্যানেজ করার জন্য প্রথমটা হচ্ছে ব্যাংকের লোন তো ব্যাংকে লোন নিলে আপনাকে মোটা অংকের সুদ দিতে হবে যেটা কিন্তু খুবই রিস্ক , এবং আরেকটি উপায় হচ্ছে আপনার কোম্পানির মালিকানা বিক্রি বা শেয়ার বিক্রি। আপনি যদি আপনার কোম্পানির 10% মালিকানা বিক্রি করেন এবং গ্রাহক দের কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকা নিতে পারেন তাহলে লাভ যেটা হচ্ছে আপনাকে কিন্তু এ টাকাটি তাদেরকে ফেরত দিতে হবে না আপনার কোম্পানি ভালো চললে, আপনার কোম্পানি থেকে ভালো প্রফিট আসলে তারাও কিন্তু ভালো একটি প্রফিট পাবে এবং আপনার কোম্পানি যদি একটু লসে চলে সে ক্ষেত্রে তারাও লস এ চলবে। বর্তমানে এই সিস্টেমটি প্রত্যেকটি বড় বড় কোম্পানি চালু করেছে।
প্রায় প্রত্যেকটি দেশে স্টক এক্সচেঞ্জ ব্যবস্থা রয়েছে যেখানে কোম্পানিগুলো তাদের শেয়ার কেনাবেচা করতে পারে। ভারতের যেমন রয়েছে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (NSE) এবং বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (BSE)।
ঠিক তেমনি বাংলাদেশের রয়েছে Dhaka stock exchange, Chittagong stock exchange ইত্যাদি।
তো ওই কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করার জন্য এসব স্টক এক্সচেঞ্জ এ গিয়ে রেজিস্টার করতে হবে এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শেয়ার ক্রয় বিক্রয় করতে পারবে।
শেয়ার বাজারে একাউন্ট কিভাবে করব ?
শেয়ারবাজারে কাজ করতে গেলে আপনাকে ডিম্যাট (demat) অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে যে কোন ব্রোকার এর মাধ্যমে। এই ডিম্যাট একাউন্টের কাজ হল আপনি যখন শেয়ার মার্কেট থেকে টাকা ইনকাম করবেন সেই টাকাটা প্রথমে ডিম্যাট একাউন্টে যাবে তারপর এই ডিম্যাট একাউন্ট থেকে টাকাটা ব্যাংকে ট্রান্সফার হয়।
ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য যে কোন ব্রোকার এর প্রয়োজন হয়। মার্কেটে বিভিন্ন ধরনের প্রকার রয়েছে। আপনি সুবিধা মতো যে কোন প্রকারের মাধ্যমে ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলে নিবেন তবে আমি আপনাদেরকে সাজেস্ট করব আপনারা Angel broking ব্রোকার এ demat অ্যাকাউন্ট এখন খুলুন।
তো এবার আপনাদের প্রশ্ন হল ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে কি কি লাগে তো demat এখন খোলার জন্য আধার কার্ড, প্যান কার্ড, আপনার ব্যাংক একাউন্ট , আপনার ফটো এবং আপনার signature (যেটি স্ক্যান করতে হবে ) এই সমস্ত জিনিস গুলি প্রয়োজন হয়।
তারপর আপনারা Angel broking অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে গিয়ে ফ্রিতে demat অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন আশা করি শেয়ার বাজার একাউন্ট খোলার নিয়ম টি বুঝতে পারলেন।
শেয়ার বাজারে কিভাবে বিনিয়োগ করব ?
স্টক মার্কেট বা শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করার জন্য আপনার একটি একাউন্ট এর প্রয়োজন হবে বাংলাদেশ থেকে হলে বিও (Bo) অ্যাকাউন্ট এবং ইন্ডিয়া থেকে হলে ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট। তো আপনাদেরকে প্রথমে যেকোনো প্রকারের মাধ্যমে এইখানে অ্যাকাউন্ট করতে হবে যেটি উপরে আলোচনা করলাম।
যে ব্রোকার মাধ্যমে বিও (bo) অ্যাকাউন্ট বা ডিমাট একাউন্ট খুলেছেন সেই ব্রোকার এর অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে গিয়ে স্টক কেনাবেচা করতে পারবেন। আমি উপরে Angel broking ব্রোকার কথা বলেছিলাম আপনি চাইলে অন্য কোন ব্রোকার এর মাধ্যমে একাউন্ট খুলে সেই অ্যাপ বা ওয়েব সাইটে গিয়ে স্টক বা শেয়ার ক্রয় বিক্রয় করতে পারবেন। তো শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের পদ্ধতি এই বিষয়টি জানতে পারলেন।
শেয়ারের দাম বাড়ে বা কমে কেন ?
একটা শেয়ার মার্কেট বা স্টক মার্কেট এর মধ্যে লক্ষ লক্ষ ইনভেস্টর এবং ইন্ডিভিজুয়াল ট্রেডার থাকে এবং ওই কোম্পানির সম্পর্কে তাদের প্রত্যেকের ধারণা থাকে। তারা পরোক্ষভাবে কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়া ও কমার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বেশিরভাগ মানুষ যদি একটি কোম্পানি শেয়ার কিনে তাহলে সেই স্টক বা শেয়ার দাম বেড়ে যায়। তবে বেশিরভাগ মানুষ যদি একটি কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে দেয় তাহলে শেয়ার কমে যায়।
অর্থাৎ সহজ ভাবে বলতে গেলে একটি কোম্পানির শেয়ার এর চাহিদা যখন বেশি হবে এবং মার্কেটে কম পাওয়া যাবে তখন এটির দাম বেড়ে যাবে । অপরদিকে কোম্পানির শেয়ারের চাহিদা যত কম থাকবে শেয়ার এর দাম কত কমে যাবে। আশা করি আপনারা বুঝতে পারলেন কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ে বা কমে কেন।
শেয়ার বাজারে লস কেন হয় ?
শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে ধারণা না নিয়ে বা স্টক মার্কেট নিয়ে রিসার্চ না করে এতে ইনভেস্ট করলে আপনার লস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। Share market নিয়ে আপনার যদি পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকে তাহলে কিন্তু আপনার লস অনিবার্য। শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে আপনার যদি পর্যাপ্ত জ্ঞান থেকে থাকে, আপনি যদি অনেক বছরের অভিজ্ঞ হন তাহলে শেয়ার মার্কেটের লসটাকে ম্যানেজ করে নিতে পারবেন।
এছাড়া যারা নতুন শেয়ার মার্কেটে টাকা ইনভেস্ট করার কথা ভাবে তারা সব সময় চায় অল্প টাকা বিনিয়োগ করে কিভাবে বেশি ইনকাম করা যায় যেহেতু তারা নতুন তাই স্টক মার্কেট সম্পর্কে সেরকম জ্ঞান থাকে না তাই তারা শর্ট টাইম এর জন্য ইনভেস্টমেন্ট করে এতে কিন্তু লস হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। একটা কথা মাথায় রাখবেন লং টার্মের জন্য ইনভেস্টমেন্ট করলে প্রফিট বেশি আসে। এর জন্য আপনাকে অবশ্যই কখন শেয়ারের দাম বাড়ে । শেয়ার বাজার টেকনিক। শেয়ার বাজারের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো আপনাকে জানতে হবে।
শেয়ার বাজারে সর্বনিম্ন কত টাকা বিনিয়োগ করা যায় ?
Share market এ আপনি কত টাকা বিনিয়োগ করতে চান এটা নির্ভর করে আপনার উপর। Share market এ আপনি ১০০ টাকা ইনভেস্ট করতে পারেন তবে এই টাকাটির প্রফিট আনার জন্য আপনাকে অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করতে হবে। আইপিওর মাধ্যমে শেয়ার কেনার জন্য আপনার থেকে প্রায় 10000 টাকা ইনভেস্টর প্রয়জন পড়ে।
শেয়ারবাজার সম্পর্কে আপনার যদি পর্যাপ্ত ধারণা থাকে তবে সেখানে 20 হাজার থেকে ২৫ হাজার ইনভেস্ট করা উত্তম এতে প্রফিট বেশি আসার সম্ভাবনা থাকে।
সবশেষে : শেয়ার বাজার a to z সব রকমের তথ্য আশা করি এই আর্টিকেল থেকে জানতে পারলেন যেমন শেয়ার বাজার ব্যবসা কি বা স্টক মার্কেট কি | শেয়ার বাজার কত প্রকার | শেয়ার বাজার একাউন্ট খোলার নিয়ম ইত্যাদী।
শেয়ার বাজার বলতে কি বুঝায় নিয়া আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই নিচে থাকা কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত জানাতে পারেন