হোস্টিং কি ? হোস্টিং কত প্রকার ও কি কি

 যারা মূলত ইন্টারনেট ব্যবহার করে তারা প্রায় প্রত্যেকে ডোমেইন হোস্টিং এ দুটো নাম শুনেছে। তো আগের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করেছি ডোমেইন কি, তো সেই ধারাবাহিকতায় আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব

hosting meaning in bengali

আপনি যদি প্রফেশনাল ভাবে একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান তাহলে আপনার প্রয়োজন পড়বে ভালো মানের একটি হোস্টিং ।

হোস্টিং কি এটা আপনারা অনেকেই জানেন না, তো আজকের আর্টিকেলটি যদি ধৈর্য ধরে সম্পন্ন পড়েন তাহলে web hosting কি | হোস্টিং কেন প্রয়োজন | হোস্টিং কত প্রকার । বাংলাদেশের সেরা হোস্টিং কোম্পানি কি ইত্যাদি বিষয়ে জানতে পারবেন। 

চলন তাহলে বেশি কথা না বলে হোস্টিং কাকে বলে এ বিষয়টি জেনে নিই। 

 হোস্টিং কি ? (What is web hosting in bangla)

ওয়েবহোস্টিং হলো একটি অনলাইন সার্ভিস বা সিকিওর জায়গা, যা ওয়েবসাইটের বিভিন্ন ফাইলগুলোকে ইন্টারনেটে প্রকাশ করতে দেয় । তো একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরি করার পর সেই ওয়েবসাইটে আমরা বিভিন্ন কন্টেন্ট, ফটো ভিডিও ইত্যাদি পাবলিশ করি ।

তো ওয়েব সাইটে এই ফটো, ভিডিও, কনটেন্ট অর্থাৎ বিভিন্ন রকম ডেটা আপলোড করার জন্য স্পেস বা মেমোরি প্রয়োজন। তো ঠিক ওয়েব হোস্টিং এ হলো এক ধরনের মেমোরি, যেখানে তাদের সার্ভার এর মেমোরি স্পেসে ওয়েবসাইটের বিভিন্ন ডাটা স্টোর  হয় এবং একাধিক ভিজিটর একই সাথে ওয়েবপেজ ফাইলগুলিতে অ্যাক্সেসের অনুরোধ করে।

উদাহরণ স্বরূপ, যদি আপনার আশেপাশে আপনি একটি স্টোর বা দোকান ভাড়া নিতে চান, তাহলে সে দোকানের সাথে আপনার একটা চুক্তি করে নিতে হয়, তারপর ওই দোকানে মাল রাখার জন্য একটি ফিজিক্যাল স্পেস প্রয়োজন হয়,

ঠিক একই রকম ভাবে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য অর্থাৎ ওয়েবসাইটের বিভিন্ন ডেটা স্টোর করার জন্য , ইন্টারনেটের একটি জায়গায় চুক্তি এবং স্পেস ভাড়া নিতে হয় আর কাজটা করে থেকে ওয়েব হোস্টিং  কোম্পানিগুলো। তাহলে হোস্টিং বলতে কী বুঝায় এ বিষয়টি বুঝতে পারলেন।

হোস্টিং কাকে বলে ?

ওয়েবসাইট এর বিভিন্ন ফাইল ফটো ভিডিও ডকুমেন্ট কনটেন্ট ইত্যাদি আপলোড করার একটি নির্ধারিত স্পেস এর প্রয়োজন হয়, আর এই নির্ধারিত স্পেস কে বলা হয় ওয়েব হোষ্টিং।  হোস্টিং সার্ভারের মাধ্যমে ওয়েবসাইট ডাটা গুলো ইউজারদের সামনে ফুটে ওঠে এবং আমরা দেখতে পাই।

হোস্টিং কত প্রকার ও কি কি (Types of Web Hosting in Hindi)

আপনারা এতক্ষণ জানলেন ওয়েব হোস্টিং কাকে বলে এবার আপনাদের জানা উচিত ওয়েব হোস্টিং কত প্রকার। 

Web hosting মূলত চার প্রকার

            ১. Shared Hosting

            ২. VPS (Virtual Private Server) Hosting

            ৩. Dedicated Hosting

            ৪. Cloud Hosting

চলুন তাহলে এই প্রত্যেকটি প্রকার নিচে আরো ভালভাবে ভাবে আলোচনা করি।

. Shared Hosting 

শেয়ার্ড হোস্টিং নাম শুনে হয়তো বুঝতে পারছেন, এর অর্থ হলো web hosting কে শেয়ার করা। একটি ওয়েব সার্ভারে একাধিক ওয়েবসাইটকে পরিচালনা এবং পরিবেশনের জন্য হোস্টিং শেয়ার করে। শেয়ার্ড হোস্টিংকে ভার্চুয়াল শেয়ার্ড হোস্টিং ও বলা হয় ।

শেয়ার্ড হোস্টিং ক্ষেত্রে ওয়েব সার্ভারে আমরা একাধিক ওয়েবসাইট শেয়ার করি এর ফলে গ্রাহকদের হোষ্টিং চার্জ অনেক কমে যায়।

একচুয়ালি এইধরনের hostingহচ্ছে এন্ট্রি-লেভেল হোস্টিং। আপনি নতুন একটি ব্লক বা ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন, আপনার ওয়েবসাইটে নূন্যতম ভিজিটর আছে তাহলেই এই ধরনের হোস্টিং আপনি ব্যবহার করতে পারেন।

শেয়ার্ড হোস্টিং এর সুবিধা

• আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটের জন্য কম খরচে এই ধরনের ওয়েব হোষ্টিং গুলো ব্যবহার করতে পারবেন।

•  প্রায় সকল হোস্টিং কোম্পানি শেয়ারড হোস্টিং-এ আপগ্রেড করার বিকল্পগুলি প্রদান করে, ভবিষ্যতে আপনার ওয়েবসাইটে যদি ভিজিটর বাড়ে তাহলে আপনি hosting প্ল্যান আপগ্রেড করতে পারবেন।

• এই হোস্টিং ব্যবহার করার জন্য আপনার নির্দিষ্ট প্রযুক্তিগত কোন জ্ঞানের প্রয়োজন পড়ে না।

• ফ্রি কন্ট্রোল প্যানেল (cPanel) থাকে যেটি ব্যবহার করা খুবই সহজ।


২. VPS (Virtual Private Server) Hosting

একটি ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার (vps) এমন এক ধরনের hosting পরিষেবা যা ওয়েবসাইট চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত সফ্টওয়্যার, ডেটা হোস্ট করে। এটিকে ভার্চুয়াল বলা হয় কারণ এটি শুধুমাত্র সার্ভারের অন্তর্নিহিত ভৌত সম্পদের একটি অংশ গ্রহণ করে যা তৃতীয় পক্ষের প্রদানকারী দ্বারা পরিচালিত হয়।  

VPS হোস্টিং এর সুবিধা

• এই হোস্টিং এর পরিষেবা (performance) খুবই ভালো।

• এই হস্টিং ব্যবহারের অন্যতম সুবিধা হল, আপনি নিজের মতো করে কাস্টমাইজ করতে পারবেন এবং পরবর্তীকালে আপনি চাইলে হোস্টিং প্ল্যান আপগ্রেড করতে পারেন। 

• এর নিরাপত্তা খুবই ভালো।

• ডেডিকেটেড হস্টিং প্ল্যানের তুলনায় সস্তা, আপনার ওয়েবসাইটের যদি ভিজিটর বেশি থাকে তাহলে এই ধরনের হোস্টিং ব্যবহার করতে পারেন।

৩. Dedicated Hosting 

শেয়ার্ড হোস্টিং এর ঠিক বিপরীত হলো ডেডিকেটেড হোস্টিং। এই হোস্টিং এ সম্পূর্ণ ওয়েব সার্ভার একটি ওয়েবসাইটকে প্রদান করা হয় এবং ওই হোস্টিং এর সমস্ত কন্ট্রোল ওয়েবসাইট owner এর হাতে থাকে ।

ডেডিকেটেড হোস্টিং সুবিধা 

• এই হোস্টিং এর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ওয়েবসাইট owner কাছে থাকে

• এ ধরনের হোস্টিং এ নিরাপত্তা সবথেকে বেশি।

• ডেডিকেটেড hostingঅনেক স্থিতিশীল (stable)

• আপনার ওয়েবসাইটের স্পিড বাড়াতে চাইলে (ফার্স্ট লোডিং) এই ধরনের হোস্টিং ব্যবহার করতে পারেন।

৪. Cloud Hosting 

বর্তমান সময়ের সব থেকে জনপ্রিয় web hosting হলো ক্লাউড হোস্টিং। এটি ক্লাউড রিসোর্স ব্যবহার করে অ্যাপ্লিকেশন এবং ওয়েবসাইটগুলিকে অ্যাক্সেসযোগ্য করে তোলে। ক্লাউড রিসোর্স ব্যবহার করে অ্যাপ্লিকেশন এবং ওয়েবসাইটগুলিকে অ্যাক্সেসযোগ্য করে তোলে।

ক্লাউড hostingএকটি ওয়েবসাইটকে একাধিক সার্ভারের রিসোর্স ব্যবহারে অনুমতি দেয় যার ফলে অনেক অনেক দ্রুত কর্মক্ষমতা সম্পাদন হয়।

ক্লাউড হোস্টিং সুবিধা 

• আপনার ওয়েবসাইটের ট্রাফিক যদি অনেক বেশি হয় তাহলে এই ধরনের ওই ওয়েব হস্টিং ব্যবহার করতে পারেন।

• আলাদা আলাদা ওয়েব সার্ভারে ডেটা স্টোর হওয়ার কারণে ডেটা হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে না।

• এই hostingব্যবহার করলে আপনার ওয়েবসাইট পেজ অনেক দ্রুত লোড হয় ।

• এটি ব্যবহার করলে সার্ভার ডাউন হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

 হোস্টিং কেনার সময় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন

হোস্টিং কেনার সময় কিছু বিষয় আপনাদেরকে মাথায় রাখতে হবে সেগুলো নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

১. Bandwidth : 

ওয়েবসাইটে প্রতি সেকেন্ডে কত পরিমাণ ডেটা এক্সেস করতে পারে সেটাকে Bandwidth বলে। আপনার ওয়েবসাইটে যত বেশি ব্যান্ডউইথ হবে, অনেক লোক কোন প্রবলেম ছাড়াই আপনার ওয়েবসাইটে এক্সেস করতে পারবে, আর ব্যান্ডউইথ কম হলে ওয়েবসাইটের স্পিড কম হতে পারে।

২. Storage : 

hostingকেনার সময় স্টোরেজ এর দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। আপনি যেসব ডেটা ওয়েবসাইটে আপলোড করেন, সে সমস্ত কিছু ডেটা হস্টিং স্টোরেজ এ সংরক্ষণ করে রাখে। সুতরাং আপনারা হোস্টিং কেনার আগে Disk Space বা Storage একটু বেশি নিতে হবে।

৩. Uptime :

আপ টাইম এর অর্থ হচ্ছে আপনার ওয়েবসাইট সবসময় অনলাইন বা ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। অনেক সময় ওয়েবসাইটের সার্ভার ডাউন হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের কনটেন্ট শো করে না। সুতরাং এই বিষয়টির উপর আপনাদেরকে গুরুত্ব দিতে হবে। আজকাল প্রায় অনেক হোস্টিং কোম্পানিগুলো 99.99% Uptime গ্যারান্টি দেয়।

৪. Backup : 

Web hosting কেনার পূর্বে ভালোভাবে জেনে নিন ওই হোস্টিং প্রোভাইডার আপনাকে ব্যাকআপ সুবিধা দিচ্ছে কিনা, backup সুবিধা থাকলে আপনার ওয়েবসাইটে কোন প্রবলেম হলে সমস্ত কন্টেন্ট মুছে দিলে আবার restore করতে পারবেন।

৫. Customer support: 

কাস্টমার সাপোর্ট এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আপনার হোস্টিং এর যেকোনো সময় প্রবলেম দেখা দিতে পারে এর জন্য কাস্টমার সাপোর্ট এর প্রয়োজন হয়। এজন্য আপনাদের উচিত ভালো জনপ্রিয় হোস্টিং কোম্পানির থেকে hosting ক্রয় করা উচিত, যদিও প্রায় প্রত্যেকটি হোস্টিং কোম্পানি 24/7 customer service দেওয়ার চেষ্টা করে।

৬. Control pannel : 

ওয়েবসাইটকে ভালোভাবে ম্যানেজ করার জন্য কন্ট্রোল প্যানেলের প্রয়োজন হয়। Web hosting এ সবচেয়ে সহজ এবং অধিক ফিচার যুক্ত কন্ট্রোল প্যানেল হল Cpannel, সুতরাং সব সময় সিপ্যানেল যুক্ত হোস্টিং কেনার চেষ্টা করবেন। 

কিছু জনপ্রিয় হোস্টিং প্রোভাইডারের নাম

হোস্টিং কোথা থেকে কিনবো বা কিছু জনপ্রিয় হোস্টিং প্রোভাইডারের নাম কি সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো, যেখান থেকে আপনি ডোমেইন এবং হোস্টিং কিনতে পারবেন।

            • Hostinger

            • HostGator

            • Bluehost

            • GoDaddy

            • A2 Hosting

            • DigitalOcean 

            • DreamHost

            • Namecheap

হোস্টিং কিভাবে কিনব 

চলুন তাহলে কিভাবে হোস্টিং কিনতে হয় এ বিষয়টি আলোচনা করি , তো হোষ্টিং কেনার পূর্বে আপনাদেরকে আগে ভাবতে হবে আপনার সাইটের ট্রাফিক কেমন তো সেই অনুযায়ী হোস্টিং কিনা ভালো, 

তো হোস্টিং কেনার জন্য উপরে যে কটা হোস্টিং প্রোভাইডারের নাম বললাম, সেখানে অ্যাকাউন্ট করে, কোন হোস্টিং প্ল্যান কিনতে চান সেটি সিলেক্ট করবেন, তারপর পেমেন্ট করে হস্টিং কিনতে পারবেন। 

তবে যারা নতুন ওয়েবসাইট বানিয়েছেন তারা প্রথমে  চাইলে share hosting কিনতে পারেন এবং আপনার ওয়েবসাইট ট্রাফিক বাড়লে, hosting plan টিকে আপনি আপগ্রেড করে নিতে পারবেন।

হোস্টিং এর দাম কেমন ? 

হোস্টিং এর দাম মূলত হোস্টিং প্ল্যানের উপর নির্ভর করে। তবে আপনারা সব সময় চেষ্টা করবেন মিডিয়াম দামের একটি হোস্টিং নেওয়া, একদম কম বাজেটের হোস্টিং কখনো নিবেন না। চলুন তাহলে হোস্টিংয়ের দাম কেমন এটি আলোচনা করি।

১. Shared Hosting : এর দাম সাধারণত 130 থেকে 1000 মধ্যে।

২. VPS (Virtual Private Server) Hosting : এর দাম পরিবর্তিত হয়, আনুমানিক 800 থেকে 10000 মধ্যে।

৩. Dedicated Hosting : এটি ব্যয়বহুল একটি হোস্টেল, এর দাম শুরু হয় প্রায় 7000 হাজার টাকা থেকে।

৪. Cloud Hosting : এর দাম আনুমানিক 1000 থেকে 10000 টাকা।

তো বন্ধুরা আজকের এই আর্টিকেল থেকে হোস্টিং কি (hosting ki), হোস্টিং কেন প্রয়োজন, হোস্টিং কত প্রকার ইত্যাদি বিষয় জানতে পারলেন। 

তো হোস্টিং কাকে বলে এই নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি কেমন লাগলো অবশ্যই নিচে থেকে কমেন্ট বক্সে আপনাদের মতামত জানাতে পারেন ধন্যবাদ।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url