ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সঙ্গে আমরা কম বেশি প্রায় প্রত্যেকে জড়িত। Virtual Reality শব্দের অর্থ হচ্ছে কৃত্রিম বাস্তবতা ।
অর্থাৎ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) সত্যি নয় কিন্তু সত্যি বলে মনে হয়, আসলে এটি একটি ভার্চুয়াল জগত যা দেখতে হুবহু বাস্তব জগতের মতো অর্থাৎ এটি হচ্ছে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত বাস্তবসম্মত পরিবেশ যেখানে ব্যবহারকারী ও কাল্পনিক জগতকে simulation মাধ্যমে বাস্তবায়নে শ্রবনুভুতি এবং দৈহিক মানসিক ভাবাবেগ, উত্তেজনা, অনুভূতি প্রভৃতি অর্জন করতে সাহায্য করে।
|
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে ? |
Virtual reality ব্যবহারকারীর কাছে এমন ভাবে উপস্থাপন করে যাতে ব্যবহারকারী কে বাস্তব হতে অনুপ্রাণিত করে এবং ব্যবহার করে খুব সহজে বিশ্বাস করে নিতে পারে আমি যা দেখছি যা শুনছি সবই বিদ্যমান।
এটি কম্পিউটারের হার্ডওয়ার এবং সফটওয়্যার এর সাহায্য বাস্তবসম্মত পরিবেশ তৈরি করা হয় কিন্তু বাস্তবে একটি কাল্পনিক পরিবেশ।
তো এই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কী এটি আপনারা অনেকেই জানেন না, আজকের এই আর্টিকেলটি যদি আপনি ধৈর্য ধরে সম্পন্ন করেন তাহলে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি ব্যাখ্যা করো, ভার্চুয়াল মানে কি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বৈশিষ্ট্য কি ইত্যাদি বিষয় জানতে পারবেন।
চলুন তাহলে বেশি কথা না বলে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি এই বিষয় টি জেনে নিই
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি | What is virtual reality in Bengali
virtual reality হল কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা একটি অনুকরণবিদ্যামান (simulation) পরিবেশ, যা দেখতে হুবহু বাস্তব পরিবেশের মতো, অর্থাৎ এটা দেখলে আপনার মনে হবে আমরা একটা বাস্তব জগতে প্রবেশ করেছি কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভার্চুয়াল অর্থাৎ নকল।
VR ব্যবহার করার সময় ব্যবহারকারীর মনে হয় যেনো তিনি যা কিছু দেখছেন, শুনছেন, অনুভব করছেন তা সত্যিই উপস্থিত।
Virtual reality দুটির শব্দের সমন্বয়ে গঠিত , এখানে Virtual মানে হল সামনে এবং reality মানে হল বাস্তবতা অর্থাৎ সামনের বাস্তবতা অনুভব করা হচ্ছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি।
উদাহরণস্বরূপ, গভীর এক জঙ্গলে ডাইনোসরের তাড়া খেয়ে আপনি পালিয়ে যাচ্ছেন এরকম দৃশ্য যদি আপনার সামনে দেখানো হয় , তাহলে আপনার মনে হবে সত্যি সত্যিই আপনি ডাইনোসরের তাড়া খেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে, অর্থাৎ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কে ঘুমন্ত স্বপ্নের সঙ্গে তুলনা করতে পারি।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কাকে বলে
যে প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনি কাল্পনিক জগত থেকে বাস্তব জগতের অভিজ্ঞতা পান অর্থাৎ ভার্চুয়াল বাস্তবতায় কৃত্রিম পরিবেশটি নির্দিষ্ট ধরনের হার্ডওয়ার এবং সফটওয়্যার মাধ্যমে তৈরি করা হয় যা পুরোপুরি বাস্তব পরিবেশের মত অনুভব করে তাকে ভার্চুয়ালিটি বলে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ইতিহাস | History of virtual reality
Virtual reality শব্দটি প্রথম ব্যবহার হয় ফরাসি নাট্যকার লেখক অভিনেতা Antonin Artaud লেখা the theatre and its double বই এ।
1961 সালে মর্টান এল হেলিগ তার Sensorama যন্ত্রটিতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কেমন সেটি দেখানোর চেষ্টা করেন , কিন্তু এই প্রযুক্তির সাথে কম্পিউটারের কোন সম্পর্ক ছিল না।
1980 সালের মাঝে মাঝে সময় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে মানুষের আগ্রহ তৈরি হয় এবং এরপর থেকে ভার্চুয়ালিটির ব্যবহার বাড়তে থাকে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কিভাবে কাজ করে | How does virtual reality work
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বাস্তবে অনুধাবন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের তথ্য বিনিময় ডিভাইস ব্যবহার করা হয় যেমন মাথায় head mounted display, হাতে একটি data glove, শরীরে একটি পূর্ণাঙ্গ body shoot
virtual reality প্রধান কাজ হল দৃশ্য তৈরি করা, অর্থাৎ VR উদ্দেশ্য হলো বাস্তবের মত দৃশ্য তৈরি করা এর জন্য মূলত headset একটা বা কখনো কখনো দুটো ডিসপ্লে থাকে, এটি পরিয়ে ব্যবহারকারীকে ত্রিমাত্রিক অনুভূতির সৃষ্টি করা হয়, এটি পরে থাকলে বাইরে কোন দৃশ্য দেখা যায় না।
এখানে কম্পিউটার হার্ডওয়ার এবং সফটওয়্যার এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীকে ত্রিমাত্রিক অনুমতির সৃষ্টি করানো হয়, যা ব্যবহারকারীর কাছে বাস্তব মনে হয়।
তো এই কাল্পনিক পরিবেশ তৈরি করার জন্য কম্পিউটারে এক ধরনের গ্রাফিক্স ব্যবহার করা হয়, VA ব্যবহৃত গ্রাফিক্স সাধারণ গ্রাফিক্সের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা , এতে শব্দ এবং স্পর্শকে প্রাধান্য দেয় যাতে ব্যবহারকারীর কাছে বাস্তব হয়ে ধরা দেয়।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রকারভেদ | Types of virtual reality
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রধানত ৫ প্রকারের হয় সেগুলি হলো
১. Non-immersive Virtual Reality
২. Fully Immersive Virtual Reality
৩. Semi-Immersive Virtual Reality
৪. Augmented Reality
৫. Collaborative VR
তো এ প্রত্যেকটি প্রকার নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো
১. Non-immersive Virtual Reality
এটি কম্পিউটারের মাধ্যমে একটি ভার্চুয়াল অভিজ্ঞতা কে বোঝায়, যেখানে আপনি সফটওয়্যারের মাধ্যমে কিছু অক্ষর বা কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, এক্ষেত্রে কিন্তু বাস্তব পরিবেশের সঙ্গে আপনার কোন সম্পর্ক থাকবে না।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি কম্পিউটারে high grafic এবং realistic গেম খেলছেন, অর্থাৎ এই গেমের মাধ্যমে কিন্তু আপনি ভার্চুয়াল জগতে রয়েছেন, যেটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।
২. Fully Immersive Virtual Reality
এটিতে আপনি পুরোপুরি বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবেন, এই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আপনাকে এমন এক অভিজ্ঞতা দিবে , যা আপনি জীবনে কল্পনা করতে পারবেন না যে ভার্চুয়াল জগতে আপনি আছেন।
আপনার মনে হবে যে আপনার সাথে বাস্তবে সবকিছু ঘটছে। এতে হেলমেটে, সেন্স ডিটেক্টর, গ্লাভস এবং বডি কানেক্টর ইত্যাদী ব্যবহার করা হয় এবং এগুলি একটি শক্তিশালী কম্পিউটারের সাথে যুক্ত।
৩. Semi-Immersive Virtual Reality
এটিতে একটি কম্পিউটারে, আপনি ভার্চুয়াল স্পেস ঘুরে দেখার জন্য মাউস ব্যবহার করতে পারেন এবং মোবাইল ডিভাইসে ও আপনি স্থানটি ঘুরতে স্পর্শ এবং সোয়াইপ করতে পারেন৷
এখানে আপনি বাস্তবতা অনুভব করেন শুধুমাত্র ভার্চুয়াল অভিজ্ঞতায় কিন্তু এতে কোন বাস্তব শারীরিক নড়াচড়া নেই।
৪. Augmented Reality
অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR) হল বাস্তব সময়ে ব্যবহারকারীর পরিবেশের সাথে ডিজিটাল তথ্যের একীকরণ। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) এর বিপরীতে, যা সম্পূর্ণ কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করে, অগমেন্টেড রিয়েলিটি ব্যবহারকারীরা একটি বাস্তব-বিশ্বের পরিবেশ অনুভব করে যার উপরে উত্পন্ন উপলব্ধিমূলক তথ্য রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, আপনি আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমে নিজের ঘরের রুম দেখতে পাচ্ছেন এবং তার সাথে ওই রুমে একটি কার্টুন ক্যারেক্টারে রেখে দিলেন। অর্থাৎ আপনার মোবাইলের মধ্যে রুম এবং রুমের মধ্যে থাকা কার্টুন ক্যারেক্টার দেখতে পাবেন বাস্তবে কোন কিছু দেখতে পাবেন না।
৫. Collaborative VR
Collaborative VR হলো এমন একটি জগত যেখানে বিভিন্ন অবস্থান থেকে একাধিক মানুষ একে অপরের সাথে একটি 3D চিত্রের আকারে যোগাযোগ করতে পারে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. ব্যবসা বাণিজ্য
অনলাইনে কোন প্রোডাক্ট কেনার আগে আমরা সেই প্রোডাক্টটি 360° ভিউ থেকে ভালোভাবে দেখি, তো এই সিস্টেমটির জন্য অনেক কোম্পানি ভার্চুয়ালিটি ব্যবহার করে। এছাড়া ব্যবসায়ীরা তাদের প্রোডাক্ট সম্পূর্ণ প্রস্তুত হওয়ার আগে ভার্চুয়াল রিয়েলিটের মাধ্যমে সেগুলো পরীক্ষা করে দেখে নেই, এর ফলে অতিরিক্ত খরচ বা ঝুকি কোনটি থাকেনা।
২. চিকিৎসা বিজ্ঞানে
স্বাস্থ্য সেবায় বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের Virtual Reality সব থেকে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে অস্ত্র পাঁচার ও এমআরআই স্ক্যান করার ক্ষেত্রে এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য।
৩. শিক্ষা ক্ষেত্রে
শিক্ষা ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির এর ব্যবহার বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এটির সাহায্যে মূলত শিক্ষা গ্রহণ এবং প্রদান করা যায়।
৪. সামরিক ক্ষেত্রে
সামরিক বাহিনীতে প্রশিক্ষণের জন্য মূলত ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়, যেমন অস্ত্র চালানো, কম সময়ে ট্রেনিং দেওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে। এছাড়া এটি সাহায্যে বিমান এবং প্যারাসুট ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
৫. পর্যটন ক্ষেত্রে
যেসব জায়গায় সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ বা সেখানে যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার সেক্ষেত্রে উচ্চ ক্ষমতার লেন্স সহ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে ত্রিমাত্রিক বস্তুকে ভালোভাবে দেখা যায় ।
৬. ড্রাইভিং এর ক্ষেত্রে
বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চালনা এবং প্রশিক্ষনের ক্ষেত্রে VR ব্যবহার করা হয়।
৭. খেলাধুলা ও বিনোদন ক্ষেত্রে
বর্তমানে কম্পিউটার ব্যবহার করে VR মাধ্যমে খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করা যায়, এছাড়া বিনোদনের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা হয়।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সুবিধা
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সুবিধা হল
১. Virtual Reality একটি বাস্তববাদী বিশ্ব তৈরি করে।
২. ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা একটি কৃত্রিম পরিবেশ নিয়ে পরীক্ষা করতে পারে।
৩. Virtual Reality শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদন ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম
৪. এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাড়িতে বসে অনেক ভালো অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা যায়।
৫. এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংযোগ তৈরি করতে পারেন অর্থাৎ যোগাযোগ করতে পারেন।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অসুবিধা
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সুবিধা যেমন আছে বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে সেগুলো নিম্নে নিয়ে আলোচনা করা হলো
১. ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি খুবই ব্যয়বহুল।
২. এটি অত্যন্ত জটিল প্রযুক্তি নিয়ে গঠিত।
৩. ভার্চুয়াল রিয়েলিটি পরিবেশে আমরা বাস্তব জগতের মতো আমাদের নিজস্বভাবে চলতে পারি না।
তো বন্ধুরা আজকের এই আর্টিকেল থেকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কাকে বলে (Virtual Reality ki) অর্থাৎ ভার্চুয়াল মানে কি । ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বৈশিষ্ট্য কি । ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রভাব কি ইত্যাদী বিষয় জানতে পারলেন।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বলতে কি বোঝায় (Virtual Reality meaning in bengali) এই নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলটি কেমন লাগলো অবশ্যই নিচে থাকা কমেন্ট বক্সে আপনাদের মতামত জানাতে পারেন ধন্যবাদ।