ড্রপ শিপিং বিজনেস কি – বর্তমানে এই ডিজিটাল যুগে অনলাইন বিজনেস এর পরিধি ব্যাপক বেড়েছে। আমরা অনেকেই কিন্তু অনলাইনে কেনাকাটা করি।
তো যারা ঘরে বসে কোনরকম ইনভেস্ট ছাড়া অনলাইন বিজনেস করতে চান তাদের জন্য সবথেকে ভালো মাধ্যম হলো ড্রপ বিজনেস।
এখানে কোনরকম প্রোডাক্ট না কিনে আপনি অনলাইনে বিজনেস করতে পারবেন এবং ফ্রি টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
এটি বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় অনলাইন বিজনেস। এটি যে কেউ করতে পারবে। তা আপনারা যদি এই ব্যবসা সম্পর্কে কোন কিছু না জেনে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য।
আজকের এই আর্টিকেলটি ধৈর্য ধরে সম্পন্ন পড়লে ড্রপশিপিং কি । ড্রপ শিপিং বিজনেস কিভাবে শুরু করবেন। ‘ড্রপশিপিং বাংলাদেশ এ করা যাবে কিনা ইত্যাদি বিষয়।
ড্রপশিপিং কি | What is Dropshipping in bangla
ড্রপ শিপিং হলো একটি ব্যবসায়িক মডেল, যেখানে আপনি একটি অনলাইন স্টোর পরিচালনা করতে পারেন কিন্তু সেখানে আপনার কোন প্রোডাক্ট স্টক করা লাগেনা। আপনার কাজ হল কাস্টমারের কাছ থেকে মাল অর্ডার নিয়ে সাপ্লায়ার কে অর্ডারটি দিয়ে দেওয়া, প্যাকেজিং ডেলিভারি সমস্ত কিছু সাপ্লাইয়ারা করবে। তারপর আপনি প্রোডাক্টের মার্জিন রেখে কেনা দামটা সাপ্লাই দেরকে দিয়ে দিবেন। এই পদ্ধতি হলো ড্রপ শিপিং।
ড্রপ শিপিং বিজনেস কি | dropshipping meaning bangla
ড্রপ-শিপিং এমন একটি ব্যবসা যেখানে কোন প্রোডাক্ট না কিনে বিক্রি করতে পারবেন।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, কোন প্রোডাক্ট কেনা ছাড়াই কাস্টমারের কাছে বিক্রি করার মাধ্যম কে ড্রপ শিপিং বলে।
অর্থাৎ কোনো একজন সাপ্লাই এর প্রোডাক্ট আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইট ফেসবুক পেয়ে বা অন্য কোথায় মার্কেটিং করে বিক্রি করবেন অর্থাৎ এই সমস্ত জায়গা থেকে যদি কাস্টমাররা কোন প্রোডাক্ট অর্ডার করে সেই অর্ডার অর্ডার টা আপনি সাপ্লাই এর কাছে পাঠাবেন।
তারপর সাপ্লার সেই প্রোডাক্টটি কাস্টমারের এড্রেসে পাঠিয়ে দেয়। তারপর আপনি প্রফিট মার্জিন রেখে সাপ্লায়ার কে প্রোডাক্ট এর দামটা পরিশোধ করে দিবেন। এক্ষেত্রে প্রোডাক্ট প্যাকেজিং, ডেলিভারি এই সমস্ত কিছু যারা সাপ্লাই করছে তারা দায়িত্ব নেই। আপনার কাজ হলো শুধু অর্ডার নেওয়া।
ড্রপ শিপিং কিভাবে কাজ করে
চলুন তাহলে একটি উদাহরণ দিয়ে ভালো করে বুঝিয়ে দিই, ধরুন আপনি একটি কিবোর্ড ৫০০ টাকায় বিক্রি করছেন, ওই সেম প্রোডাক্ট, সেটির ছবি, সমস্ত ডিটেলস দিয়ে আমি আমার ওয়েবসাইটে ৭০০ টাকা দাম রাখলাম।
এবার যদি আমার ওয়েবসাইট থেকে ৭০০ টাকায় ওই কীবোর্ডটা অর্ডার করে, তারপর আমি আপনাকে বলব ওই অ্যাড্রেসে প্রোডাক্টটি ডেলিভারি করে দিতে এবং আমি আপনাকে ৫০০ টাকা পে করে দিব, মধ্যখানে আমার যে ২০০ টাকা প্রফিট হলো এটাই হলো ড্রপ-শিপিং বিজনেস। আশা করি ড্রপ শিপিং ব্যবসা কি এটি বুঝতে পারলেন।
ড্রপশিপিং বিজনেস শুরু করার আগে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখবেন
Dropshipping শুরু করার আগে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে সেগুলোর নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. সঠিক niche নির্বাচন
এটি শুরু করার আগে আপনাকে সঠিক niche selection করতে হবে। Niche বলতে বোঝায় যে প্রোডাক্ট আপনি কাস্টমারের কাছে সেল করবেন। এমন নিস আপনাকে সিলেট করতে হবে যেগুলো চাহিদা বেশি যোগান কম এরকম।
২. প্রতিযোগিতার ক্ষমতা
আপনি যে প্রোডাক্টটি সেল করতে চাইছেন সেটির প্রতিযোগিতা কেমন সেটা আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে, এবং সেই পণ্যের চাহিদার উপরও আপনাকে গুরুত্ব দিতে হবে। যদি প্রতিযোগিতা কম এবং চাহিদা বেশি হয় তাহলে অবশ্যই আপনি , এ প্রোডাক্টের নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারবে।
৩. সাপ্লায়ারস (suppliers) নির্বাচন
এই বিজনেসের ক্ষেত্রে সাপ্লায়ারসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাদের কাছ থেকে প্রোডাক্ট কাস্টমারের বাড়িতে ডেলিভারি যাবে, তাদের উপরে দায়িত্ব থাকে যেমন প্যাকেজিং ডেলিভারি কাস্টমার সাপোর্ট ইত্যাদি।
সুতরাং আপনাদেরকে ভালোভাবে যাচাই করতে হবে যে suppliers রা নির্ভরযোগ্যতার নিশ্চিত করতে পারবে কিনা। এজন্য আপনাকে ভালো সাপ্লায়ার খুঁজে বের করতে হবে।
৪. প্রোডাক্টের গুণমান যাচাই
আপনি যে প্রোডাক্টটা সেল করতে চাইছেন সেই প্রোডাক্টটার গুণগত মান কেমন সেটা আপনাকে যাচাই করতে হবে। প্রোডাক্টের কোয়ালিটি যদি খারাপ হয় তাহলে আপনি বেশি দিন টিকে থাকতে পারবেন না। সুতরাং আপনি যে প্রোডাক্ট টা সিলেক্ট করেছেন সেই প্রোডাক্ট টা কেমন , তার রিভিউ কেমন flipkart amazon ইত্যাদি জায়গা থেকে যাচাই করে নেবেন।
৫. ডেলিভারির সময়
সঠিক টাইমে প্রোডাক্ট ডেলিভারি হচ্ছে কিনা সেটা আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে, ডেলিভারির সমস্ত দায়িত্ব যেহেতু suppliers করে থাকে সেজন্য তাদের সঙ্গে অনবরত যোগাযোগ করতে হবে যাতে মালটা সঠিক টাইমে ডেলিভারি হয়।
৬. মজুত ব্যবস্থা
কোন প্রোডাক্ট অর্ডার ধরার আগে আপনাকে জেনে নিতে হবে ওই প্রোডাক্টের মজুত সাপ্লাইয়ের কাছে আছে কিনা, সুতরাং প্রোডাক্টের কোয়ান্টিটি আগে জেনে তারপর অর্ডার নিবেন।
ড্রপ শিপিং ব্যবসা কিভাবে শুরু করবো | how to start dropshipping business in bangladesh
ড্রপ শিপিং ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথমেই আপনাকে একটি ই কমার্স ওয়েবসাইট লাগবে এর জন্য আপনি ফ্রিতে ওয়েবসাইট বানাতে পারবেন। dropshipping জন্যে shopify থেকে ওয়েবসাইট তৈরি করা সব থেকে ভালো মাধ্যম।
তো shopify থেকে ই-কমার্স ওয়েবসাইট আপনাকে বানাতে হবে, তো ডোমেইন নেম সেটাপ করে ওয়েবসাইট বানিয়ে নেবেন।
তারপর আপনার সাপ্লায় এর কাছ থেকে প্রোডাক্ট নিয়ে ওই সপিফাই ই কমার্স ওয়েবসাইটে প্রোডাক্টগুলো যুক্ত করুন এবং প্রত্যেকটি প্রোডাক্ট এর ছবি তার ডেসক্রিপশন তার দাম কত সমস্ত কিছু এড করতে হবে।
পেমেন্ট গ্রহণ করার জন্য একটি payment getway তৈরি করুন যে কেউ যেনো অনলাইন পেমেন্ট করে প্রোডাক্টটা কিনতে পারবে।
কত দিনের মধ্যে আপনি মালটা ডেলিভারী দিবেন সে সমস্ত বিষয় আপনাকে সেখানে লিখে দিতে হবে।
তারপর আপনাকে প্রত্যেকটি প্রোডাক্টের ইমেজ ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় মার্কেটিং করতে হবে যেমন facebook, instagram, youtube ইত্যাদি কারণ সেখান থেকে আপনি প্রচুর পরিমাণে কাস্টমার পেতে পারেন।
পরবর্তীকালে আপনার ওয়েবসাইট থেকে কেউ কোনো প্রোডাক্ট কিনলে প্রোডাক্টের মার্জিন রেখে দিয়ে আসল দামটা সাপ্লায়ারকে দিয়ে দিতে হবে। এভাবেই এখান থেকে ইনকাম করতে পারবেন। আশা করি ড্রপশিপিং কিভাবে কাজ করে এ বিষয়টি বুঝতে পারলেন।
শপিফাই ড্রপশিপিং কি | shopify dropshipping ki
শপিফাই ড্রপশিপিং হল এমন এক ধরনের বিজনেস মডেল যেখানে কোন মাল স্টক না রেখে সেটি বিক্রি করতে পারবেন।
এর জন্য আপনার একটি প্রয়োজন ই-কমার্স ওয়েবসাইট। আর শফিফাই থেকে ওয়েবসাইট বানিয়ে এরকম ইনকাম করা কে বলা হয় shopify ড্রপ শিপিং বিজনেস।
ড্রপশিপিং এর সুবিধা
ড্রপশিপিং বিজনেস এর সুবিধা অনেক রয়েছে সেগুলোর নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. এই ধরনের ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনাকে কোন প্রোডাক্ট স্টোর করে রাখতে হবে না এই ব্যবসায় আপনাকে গ্রাহক এবং স্যাপ্লায়ারের মধ্যে সব সময় যোগাযোগ রাখতে হবে।
২. ডেলিভারি, প্যাকেজিং, কাস্টমার সাপোর্ট এ সমস্ত কিছু নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না, আপনি শুধু অর্ডার নিবেন তারপর অর্ডারটা সাপ্লায়ারকে দিয়ে দিবেন বাকি কাজ ওরাই করবে।
৩. এখানে আপনাকে অনেক কম টাকা বিনিয়োগ করতে হবে, শুধুমাত্র অনলাইন স্টোরের জন্য কিছু টাকা লাগবে। কিন্তু বাড়িতে যেকোনো ছোটখাটো বিজনেস শুরু করতে গেলে টাকা লাগবেই , কিন্তু এটার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ খুবই কম
৪. ড্রপশিপিং বিজনেস যেকোনো জায়গায় আপনি করতে পারবেন নিজের বিছানায় বসে ও করতে পারেন, এর জন্য কোন স্পেশাল জায়গা বা অফিসের প্রয়োজন হয় না। এটার জন্য জন্য প্রয়োজন শুধু ইন্টারনেট কানেকশন।
৫. কোন কর্মচারীর প্রয়োজন হয় না আপনি নিজে একা, এই বিজনেস করতে পারেন সে ক্ষেত্রে আপনার কর্মচারীকে বেতন দেওয়ার কোন ঝামেলা থাকে না।
৬. কোন চাপ বা রিস্ক আপনার থাকে না, সাধারণত ব্যবসার ক্ষেত্রে মাল না বিক্রি হলে আপনার চাপ বেড়ে যায় এবং আপনার লসও হতে পারে, এক্ষেত্রে কিন্তু সেরকম হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
৭. এ ব্যবসার মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে আপনি প্রোডাক্ট সেল করতে পারবেন।
ড্রপশিপিং এর অসুবিধা
এর সুবিধার তুলনায় অল্প কিছু অসুবিধা আছে। আসুন এবার ড্রপশিপিং বিজনেসের অসুবিধা গুলো নিচে আলোচনা করি
১. বর্তমানে এই ব্যবসার প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে গেছে, সেক্ষেত্রে আপনি বেশি মার্জিন রেখে প্রোডাক্ট সেল করতে পারবেন না, সুতরাং এর মার্জিন কম রেখে বিক্রি করতে হয়। বেশি প্রফিট করতে গেলে আপনাকে অবশ্যই বেশি বেশি প্রোডাক্ট সেল করতে হবে।
২. ড্রপ শিপিং ব্যবসা সাপ্লায়ার এর উপর নির্ভর করতে হয়, ফলে সব সময় সব প্রোডাক্ট এভেইলেবল থাকে না। এক্ষেত্রে পরিচালনা করতে একটু অসুবিধা হয় ।
৩. বর্তমানে ড্রপ শিপিং ব্যবসার প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে গেছে।
ড্রপশিপিং কি হালাল
ধরুন একটি প্রোডাক্ট এর দাম ২০০ টাকা আমি সেই প্রোডাক্টের দাম ৩০০ টাকা করে আমার ওয়েবসাইট বা ফেসবুকের মাধ্যমে সেল করলাম, এবং ক্রেতাকে দুইশ টাকা দিয়ে দিলাম বাকি ১০০ টাকা আমি নিজের কাছে রেখে দিলাম। প্রশ্ন হচ্ছে এই ধরনের ব্যবসা জায়েজ কিনা
ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে ড্রপ শিপিং বৈধ নয়। কারণ ওই প্রোডাক্ট এর মালিক নন। এই ব্যবসায় আপনি সরবরাহকারী এবং গ্রাহকদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে কমিশন পাচ্ছেন। সুতরাং এটি হালাল নয়।
তো বন্ধুরা আজকের এই প্রবন্ধে, ড্রপ শিপিং সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি যেমন, ড্রপ শিপিং কি (drop shipping ki), ড্রপশিপিং ওয়েবসাইট কিভাবে বানাবেন। ড্রপশিপিং কি হালাল নাকি হারাম । ড্রপশিপিং কিভাবে করে ইত্যাদি।
ড্রপশিপিং মানে কি (dropshipping meaning bangla) এই নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলটি কেমন লাগলো অবশ্যই নিচে থেকে কমেন্ট বক্সে আপনি মন্তব্য করতে পারেন ধন্যবাদ।